ফ্রিল্যান্সিং-এ আত্মনির্ভরতা এবং একটি স্বউদ্যমী মানুষের গল্প
প্রথাগত ধারণার বাইরে থেকে, নতুন কিছু করতে ইচ্ছা থাকে অনেকেরই। কিন্তু, কেউ সুযোগ পায়, কেউ পায় না, যারা পায় তারা ভাগ্যবান, কিন্তু যারা নিজের সুযোগ নিজেরা তৈরি করে নেয়, তারা? একমাত্র তাঁরা পারে সমাজকে বদলে দিতে। হোক সেটা ক্ষুদ্র পরিসরে, হোক সেটা বৃহৎ পরিসরে। এইরকম হাটি, হাটি, পা, পা করে এগিয়ে চলা এক স্বউদ্যমী মানুষের নাম মুন্সী জাহাঙ্গীর জিন্নাত। সদালাপী, সদা হাস্যজ্জল, কর্মঠ এই মানুষটি মেহেরপুর জেলার চাঁদবিল গ্রামের ইউনিক সফটওয়্যার লিমিটেডের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক, এটি একটি বাংলাদেশ ভিত্তিক বিজনেস প্রসেস আউটসোর্সিং এবং আইটি অফশোরিং ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান (বি. পি. ও) সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান।
ঢাকার নর্দান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি বি.বি.এ. ও এম.বি.এ শেষ করে গ্রামীন ফোনে প্রায় ২ বছর চাকরি এবং সাথে মনের মণিকোঠায় চলতে থাকা সংকল্প নতুন কিছু করার। প্রথগত বিদ্যায় যেখানে অনেক মানুষ নিজেকে মেলে ধরতে পারে না শেখানে নিজের চেষ্টা এবং অধ্যাবসায়ের ফলে অনেক অল্প সময়ে স্বাধীন পেশাজীবী হিসাবে ফ্রি- ল্যান্সিং জগতে বহিঃর জগতের সাথে তাল মিলিয়ে নিজেকে মেলে ধরতে সক্ষম হয়েছেন মুন্সী জাহাঙ্গীর জিন্নাত হীরক। কিন্তু, এলেন, দেখলেন ও জয় করলেন এমনটা কিন্তু হয়নি তার পথচলায়। প্রথমে, কাজটা দেখা এবং সঠিকভাবে কাজটা করাই ছিল বড় চ্যালেঞ্জ, তিনি ধীরে ধীরে সেই চ্যালেঞ্জের পথটি পাড়ি দিয়ে নিজেকে অনলাইনের জগতে প্রতিষ্ঠিত করতে থাকেন, প্রথমে তিনি এস.ই.ও (সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন) দিয়ে তার ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ার শুরু করেন। পরবর্তীতে তিনি ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, আর্টিকেল রাইটিং, ই- মেইল মার্কেটিং, ভার্চুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্টের কাজগুলো করতে থাকেন। এরই ধারাবাহিকতায় ধীরে ধীরে আসতে থাকে আয় এবং দেশে ও বিদেশে অভূতপূর্ব সম্মান। এরপর তিনি গড়ে তোলেন তার বিজনেস প্রসেস আউটসোর্সিং এবং আইটি অফশোরিং ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ইউনিক সফটওয়্যার লিমিটেড।
সামাজিক দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে তিনি প্রায় ৪০০ জন বেকার যুবককে বিনামূল্যে প্রশিক্ষণ প্রদান করেছেন, যার মধ্যে প্রায় ২৫০ জনেরও বেশি বেকার আজ নিজের আয়ে চলছে। তিনি চান, সারা বাংলাদেশ থেকে আইটি অফশোরিং এর মাধ্যমে বেকারত্বের অভিশাপ কিছুতা হলেও মুক্ত করতে। নতুনদের জন্য কি করার আছে, এমন প্রশ্নের জবাবে মুন্সী জাহাঙ্গীর জিন্নাত, জানান যে, “বিভিন্ন ফ্রিল্যান্সিং মার্কেট প্লেসে যেমন, ওডেস্ক, ফ্রিল্যান্সার, ই- ল্যান্স, গুরু, মাইক্রোওয়ার্কারস ইত্যাদিতে কাজের সুযোগ রয়েছে প্রচুর, প্রয়োজন শুধু দক্ষতা, মেধা, পরিশ্রম এবং ধৈর্যের। এ সকল মার্কেটপ্লেসে কাজের ক্ষেত্রে তিনি সাবধানতা অবলম্বনের পরামর্শ দিয়েছেন, বায়ার নির্ধারণের ক্ষেত্রে তিনি আমেরিকান বায়ারদের সকলের উপরে স্থান দিয়েছেন, কারণ আমেরিকান বায়াররা কাজ ও টাকার লেনদেনের বিষয়ে যথেষ্ট সৎ”, তিনি, টাকার লেনদেনের জন্য সরাসরি ব্যাংক ট্রান্সফার, মানিবুকারস (স্ক্রিল), পাইওনিয়ার কার্ড ও পায়জা এর উপর নির্ভরশীলতার কথা বলেছেন, সাথে তিনি এও জানান যে, “সরকার যদি পেপালের বিষয়ে আন্তরিক হয় তাহলে ফ্রিল্যান্সারদের লেনদেন সম্পর্কিত বিষয়গুলো আরও সহজতর হবে”, ফ্রিল্যান্সিং কে পেশা হিসেবে নেওয়া যায় কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “এটা সত্যি যে, কিছু ভুয়া ফ্রিল্যান্সিং কোম্পানির কারনে অনেকেই একটু নেতিবাচক ধারণা পোষণ করছে ফ্রিল্যান্সিং সম্পর্কে, তবে চিন্তার কিছুই নেই, শঙ্কার মেঘ আস্তে আস্তে কাটতে আরম্ভ করেছে, এখন অনেকেই ফ্রিল্যান্সিং কে পেশা হিসেবে বেছে নিতে আগ্রহী”, ফ্রিল্যান্সিং পেশার সবথেকে আনন্দের দিকটা হল, আপনি স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারবেন যেমন তেমনি আপনার ইনকামটাও হবে অন্য যেকোনো পেশার থেকে একটু বেশী। সব মিলিয়ে একটি আনন্দময় পেশা হিসেবে ফ্রিল্যান্সিং হতে পারে আপনার প্রথম পছন্দ। বেকারত্বের অভিশাপ মুক্ত করার জন্য এখনও মেহেরপুর জেলার চাঁদবিল গ্রামের মুন্সী জাহাঙ্গীর জিন্নাত কাজ করে চলেছেন নিরলসভাবে, তিনি স্বপ্ন দেখেন ফ্রিল্যান্সিং দিয়ে তিনি সমাজকে আলোকিত করবেন। বিস্তারিতঃ http://www.somoyerkonthosor.com/news/35848
কোন মন্তব্য নেই: