মিষ্টিবাড়ির শুরু ১ কেজি মিষ্টির দাম দিয়ে


প্রযুক্তির এই যুগে ই-কমার্সের মাধ্যমে অনেকেই এখন অনলাইনে কেনাবেচা করছে। অনলাইনে কেনাবেচা এখন শুধু শহর অঞ্চলে সীমাবন্ধ নয়, ছড়িয়ে পড়ছে গ্রামান্তরে। এখন অনলাইনে সকল পণ্য মিললেও কিছু কিছু পণ্য অনলাইনে পাওয়া খুবই কষ্টসাধ্য, তেমনি একটি পণ্য হলো মিষ্টি। এই কষ্টসাধ্য ব্যাপারটিকে সহজ করেছে দেশের বিভিন্ন জেলার মিষ্টি অনলাইনে বিক্রি করে মিষ্টিবাড়ি। 

নিজের প্রতিষ্ঠানকে অনেক উচ্চতায় নিয়ে যেতে চায় মিষ্টিবাড়ির প্রধান নিবার্হী এস এম আল-মেরাজ। মিষ্টিবাড়ির শুরু, পরিকল্পনা, সফলতা ইত্যাদি প্রভৃতি উঠে এসেছে ব্রেকিংনিউজের প্রতিবেদক অঞ্জন চন্দ্র দেবের নেয়া সাক্ষাৎকারে: 

ব্রেকিংনিউজ: আপনার সর্ম্পকে সংক্ষপে বলুন।
মেরাজ: আমার গ্রামের বাড়ি মেহেরপুর জেলার আমঝুপি গ্রামে। আমার বেড়ে উঠা গ্রামের বাড়িতে। মানবিক নিয়ে পড়াশোনা করছি মেহেরপুর সরকারি কলেজে এবারে এইচএসসি পরীক্ষার্থী। ইন্টারে উঠার পর থেকেই নিজে নিজে কিছু করার চেষ্টা সব সময় কাজ করতো। চেষ্টা করতাম নতুন কোন আইডিয়া নিয়ে কাজ করার। সে চেষ্টা থেকেই মিষ্টিবাড়ি নিয়ে যাত্রা শুরু ২০১৪ সালে।

ব্রেকিংনিউজ: মিষ্টিবাড়ির শুরুটা সর্ম্পকে বলুন?
মেরাজ: প্রথম অবস্থায় আমার মিষ্টবাড়ির ব্যবসা শুরু হয় ফেসবুক দিয়ে। মেহেরপুর জেলার বিখ্যাত ২ টা মিষ্টি দিয়ে শুরু করি। শুরুটা হয় মাত্র ৩০০ টাকা দিয়ে, যা ১ কেজি মিষ্টির দাম। প্রথম যেদিন অর্ডার পায় সেদিন আনন্দনটায় অন্য রকম ছিল। অর্ডার ছিল মাত্র ১ কেজি মিষ্টির তা ২২ কিলোমিটার দূরে পৌঁছাতে হবে। যত দূর হোক না কেন কেন প্রথম অর্ডার, সেদিন যাতায়াত খরচ বাচানোর জন্য সাইকেলে করেই অর্ডারটা দিয়েছিলাম। তারপর আস্তে আস্তে আমার কার্যক্রম বাড়তে থাকে। আর সে সাথে মিষ্টিবাড়িতে যুক্ত হতে থাকে বিভিন্ন জেলার মিষ্টি। বর্তমানে বিভিন্ন জেলার বিখ্যাত মিষ্টি ঢাকা ও আশেপাশের কয়েকটি জেলাতে আমরা মিষ্টির সেবা দিয়ে থাকি।

ব্রেকিংনিউজ: কিভাবে মিষ্টিবাড়ির কার্যক্রম পরিচালিত হয়?
মেরাজ: মিষ্টিবাড়ির সকল দায়িত্ব আমিই পালন করছি। আমার ব্যবসার কোন পার্টনার নেই, যত কষ্টই হোক আমি একই পরিচালনা করবো। বর্তমানে ঢাকা থেকেই মিষ্টিবাড়ির সকল কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। এখন নিজেই সরাসরি শ্রম দেয় ও তদারকি করছি। বিভিন্ন জেলাতে মিষ্টি বাড়ির নিজস্ব প্রতিনিধি রয়েছে আর ঢাকাতে বর্তমানে ২ জন ডেলিভারি ম্যান সাথে আমি কাজ করছি।

ব্রেকিংনিউজ: অনলাইনে কেমন সাড়া পাওয়া যায় মিষ্টির?
মেরাজ: ব্যবসাটা যেহেতু অনলাইনে, আমাদের দেশের মানুষ অনলাইনে এখানে্া কেনাকাটা করতে অভ্যস্ত হয়ে উঠেনি। যারা একবার আমাদের সেবা গ্রহন করে করেছে তারাই আমাদের সব সময়ের জন্য ক্রেতা হয়ে যায়। ক্রেতাদের আস্থা অর্জন করতে পারছি আমাদের ভালো সার্ভিস, পণ্যের মান, সঠিক সময়ে পণ্য পৌঁছে দেওয়ার উপর। 

ব্রেকিংনিউজ: অনুপ্রেরণা কোথায় থেকে পেলেন?
মেরাজ: প্রত্যেকটা ভালো কাজ শুরু করতে হলে নিজের আগ্রহ থাকবে হয়, আর সে আগ্রহ আমার সব সময় ছিল। মিষ্টিবাড়িকে এগিয়ে নিতে শুরু থেকেই আমার পাশে ছিলেন এবং সহযোগিতা ও অনুপ্রেরণা দিয়েছেন ইউনিক সফট বিডি’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মুন্সী জাহাঙ্গীর জিন্নাত, ইয়াজদানী উল্লাস ভাই, মুনিয়া রহমান ও আমার মেহেরপুর জেলার সকল ফ্রিল্যান্সার ভাইবোনেরা। ফেসবুকে চাকরি খুঁজব না চাকরি দেব গ্রুপ হতে অনেক অনেক অনুপ্রেরণা পেয়েছি। বর্তমানে দেশের অন্যতম ফ্রিল্যান্সার শাহাজাহান মোহাম্মদ শরীফ, নাজমুল হোসেন তপু ভাইসহ অনেকের অনুপ্রেরণা ও সহযোগিতা পাচ্ছি। আমি এখনও আমার পরিবারের সহযোগিতা পাইনি, আমার পরিবার এখনও আমাকে ভুল বুঝে। তবে আমি আশাবার্দী যে একদিন ঠিক তাদেরকে বুঝিয়ে তাদের সাপোর্ট অর্জন করতে পারবো।

ব্রেকিংনিউজ: ব্যবসা করতে গিয়ে কি কি সমস্যার সম্মুখীন হন?
মেরাজ: আসলে অনলাইনে ব্যবসা করতে গেলে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। যেমন- ফেক অর্ডার, কাস্টমারের বিল পরিশোধে সমস্যা, পণ্য ডেলিভারির সমস্যা, অনলাইনে মার্কেটিং এ স্পামারদের উৎপাত বেশি হওয়া। 

ব্রেকিংনিউজ: কোন কোন জেলার মিষ্টি মিষ্টিবাড়িতে পাওয়া যায়?
মেরাজ: মেহেরপুর জেলার সাবিত্রী ও রস কদম, চমচম। বগুড়া জেলার শেরপুরের দই ও খিরসা। কুমিল্লার মনোহরপুরের মাতৃভান্ডারের রসমালাই, ছানামুখি, স্পঞ্জ। নাটোরের কাঁচাগোল্লা, ময়মনসিংহ জেলার মুক্তাগাছার মণ্ডা। এছাড়াও রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, ফরিদপুর, নেত্রকোণা, টাঙ্গাইল, যশোর, চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া এবং আরও বেশ কিছু স্থানের ঐতিহ্যবাহী, বিখ্যাত মিষ্টি পাওয়া যায়। আমরা কাস্টমারদের চাহিদা অনুযায়ী বিভিন্ন জেলার মিষ্টিও নিয়ে আসি। 

ব্রেকিংনিউজ: মিষ্টিবাড়ি থেকে মিষ্টি কিনলে কি কি সুযোগ-সুবিধা পাওয়া যায়?
মেরাজ: অনলাইন থেকে মিষ্টি কিনলে কাউকে কষ্ট করে জ্যাম ঠেলে পছন্দের মিষ্টি খেতে যেতে হবে না, আমরা নির্ধানিত মূল্যের মধ্যেই পৌঁছে দিবো তার পছন্দের মিষ্টি। পেমেন্ট করা নিয়েও কোন ঝামেলা নাই রয়েছে অনলাইন পেমেন্ট ও ক্যাশ অন ডেলিভারী। ক্রেতারা ঘরে বসেই বিভিন্ন জেলার মিষ্টির স্বাদ গ্রহন করতে পারনে। 

ব্রেকিংনিউজ: মিষ্টিবাড়ি থেকে মিষ্টি কিনলে বিশ্বাস ও নির্ভরযোগ্যতা কতটুকু রয়েছে?
মেরাজ: আসলে বিশ্বাসটা নিজের কাছে। একজন ক্রেতা যখন কোন ই-কমার্স সাইট থেকে প্রতারিত হয়, তার অনলাইন কেনাকাটর উপর বিশ্বাস হারিয়ে যায়। আমরা এই ধরনের ক্রেতাকে সুযোগ দিয়ে থাকি, পণ্য পাওয়ার পর তার স্বাদ গ্রহন করে আমাদের বিল পরিশোধ করার সুযোগ থাকে। মিষ্টিবাড়ি এসেছে অনেক বড় স্বপ্ন নিয়ে, মিষ্টিবাড়ি সবার বিশ্বাসের মাধ্যম হতে চায়। ভালো মানের সার্ভিস দিয়ে আমরা মানুষের আস্থা তৈরি করতে চাই।

ব্রেকিংনিউজ: ব্যবসার প্রসার সর্ম্পকে বলুন?
মেরাজ: আগেই বলেছি ক্রেতারাই আমাদের ব্যবসার প্রচার করে থাকে। এরপর ব্যবসার বড় প্রচার হলো ফেসবুক, আমরা ফেসবুকে প্রচার করে থাকি (www.facebook.com/mistibari.com.bd)। রয়েছে মিষ্টিবাড়ির অনলাইন স্টোর www.mistibari.com।

ব্রেকিংনিউজ: ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সর্ম্পকে বলুন?
মেরাজ: ভবিষ্যৎতে মিষ্টিবাড়িকে বাংলাদেশের সেরা খাবারের ও মিষ্টির নির্ভরযোগ্য একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতে চাই এবং ঢাকার পাশা-পাশি দেশের অন্য সকল জেলাতে আমাদের সেবা চালু করতে চাই। আমার মিষ্টি বাড়ি যেমন আমাকে কাজের ব্যস্ততার কারনে ঘুমাইতে দেয় না ইনশাআল্লাহ্‌, আমি আমার মিষ্টিবাড়িকেও কোনদিন ঘুমিয়ে যেতে দিব না। 

ব্রেকিংনিউজ: আপনাকে অনেক ধন্যবাদ সময় দেয়ার জন্য।
মেরাজ: আপনাকে ও ব্রেকিংনিউজ ডটকম ডটবিডিকে অনেক ধন্যবাদ। সূত্রঃ ব্রেকিংনিউজ

কোন মন্তব্য নেই:

Blogger দ্বারা পরিচালিত.