মেহেরপুরে আউট সোর্সিং-এ ৩৩ যুবকের সাফল্য ॥ প্রধান উদ্যোক্তা মুন্সী জাহাঙ্গীর জিন্নাত

মেহেরপুর সদর উপজেলার চাঁদবিল গ্রামের ৩৩ যুবক আউটসোর্সিং এর মাধ্যমে তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটিয়েছেন। প্রযুক্তির যুগে ঘরে বসেই অর্থ উপার্জন করা যায় তার উদাহরণ ওই যুবকেরা। প্রধান উদ্যোক্তা মুন্সী জাহাঙ্গীর জিন্নাত প্রতি মাসে আয় করছেন ৮০ থেকে ৯০ হাজার টাকা।
Logo of Meherpur News 24

বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম বলেছিলেন ‘বিশ্বটাকে দেখবো আমি আপন হাতের মুঠোয় পুরে। বর্তমান সময়ের মানুষ ইন্টারনেটে বসে বিশ্বকে দেখার স্বপ্ন পূরণ করছে। শুধু বিশ্বকে দেখাই নয়, রোজগারও করছে ঘরে বসে। ফ্রিল্যান্সিং বা আউট সোর্সিং শব্দটির সাথে মফস্বলের মানুষ এখনও তেমন পরিচিত হয়ে উঠতে পারেনি। তবে মেহেরপুরের আমঝুপি গ্রামের মুন্সি জাহাঙ্গীর জিন্নাত হিরক আউট সোর্সিংকে কাজে লাগিয়ে আয় করছেন মোটা অংকের টাকা। ২০০৪ সালে বেসরকারী বিশ্ব বিদ্যালয় নর্দান ইউনিভার্সিটিতে বি.বি.এ ভর্তি হোন তিনি। ভর্তির শুরু থেকেই আইটির প্রতি ঝুকে পড়েন। এ সময় থেকে শখের বসে তিনি আউটসোর্সিং এর কাজ শুরু করেন। ২০০৬ সালে অনার্স চলাকালিন সময়ে একটি মোবাইলফোন কম্পানিতে চাকুরি শুরু করেন। ২০০৯ সালে চাকুরির পাশাপাশি ফ্রীল্যান্সার শুরু করেন। ২০১০ সালে একই ইউনিভার্সিটি থেকে এম.বি.এ.শেষ করেন। একই সময়ে চাকুরি ছেড়ে দিয়ে তার নিজ গ্রাম চাঁদবিলে চলে আসেন। সেখানে তার নিজ বাড়িতে আবারও ফ্রীল্যান্সারের কাজ শুরু করেন। প্রথম প্রথম এটি নিছক পাগলামি বলে অনেকে নিরুৎসাহিত করার চেষ্টা করেন। কিন্তু হাল ছাড়েননি তিনি। এক সময় পেয়ে যায় ওডেক্স’ সহ আউটসোর্সিং এর মাধ্যমে আয়ের পথ। এখন তিনি মাসে ৮০ থেকে ৯০ হাজার টাকা আয় করছেন।

মুন্সী জাহাঙ্গীর জিন্নাত ২০১০ সালে কলি ইনকর্পোরেটচু এ প্রজেক্ট ম্যানাজার হিসিবে যোগদান করেন। ওখানে ওয়ার্ডপ্রেসডেভোলপমেন্ট, সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন, সোশাল মিডিয়া মার্কেটিং নিয়ে কাজ করেন। টানা ১ বছর ৪ মাস কাজ করেন। ২০১১ সালে আমেরিকা ভিত্তিক একটি প্রতিষ্ঠান “পিকলিমোইন কর্পোরেট”-এস.ইও ওম্যানেজার হিসাবে যোগদান করেন। এখানে প্রথমে তিনি কন্টেন্ট লেখক হিসাবে যোগদান করেন। পরবর্তীতে বায়াররা তাঁকে ম্যানেজার হিসাবে পদউন্নতি করেন। এখানে তিনি টানা ১ বছর ৬ মাস কাজ করেন। ২০১২ সালে আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়া ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান “লেভারেল ফিনান্সিয়াল মার্কেটিং ইনকর্পোরেট”-এস ইও-এর অ্যাসিস্ট্যান্ট (ভার্চুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্ট) হিসাবে যোগদান করেন। এখানে সিইও-এর ই-মেইল চেক, ই-মেইলের উত্তর দেয়া, ও ক্লাইন্টদের সাথে যোগাযোগ করা, ক্লাইন্টদের সমস্যার সমাধান, ওয়েব রিসার্চ, কন্টেন্ট লেখকের কাজ করেন। এখানে ৭ মাস কাজ কাজ করেন তিনি। ২০১৩ সালে অস্ট্রেলিয়া ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান “ব্রাউজিং মিডিয়া লিমিটেডে এসইও প্রোজেক্ট ম্যানেজার হিসাবে যোগদান করেন। ঐ প্রোজেক্টের অন্যান্য এস ই ও এক্সপার্টদের দেখাশোনা করেন। এছাড়াও প্রতিষ্ঠানের অন্যান্য ক্লাইন্টদের দেখাশোনা করেন, তাদের সমস্যার সমাধান করেন, বিজনেস ডেভেলপমেন্টে কাজ করেন, পাশাপাশি এস ইও, কন্টেন্ট লেখা, ওয়েবসাইট ডেভেলপমেন্টের কাজ করেন। এসব প্রতিষ্ঠান শুধু তিনি নিজেই নয়, এখন তিনি আমঝুপিতে একটি অফিস নিয়ে ‘ইউনিক সফট বিডি’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান খুলে আউট সোর্সিংয়ের ফ্রি শিক্ষা দিচ্ছেন। এখন তার ছাত্র সংখ্যা ৪০০ জন। এরা সবাই এখন ঘরে বসে আয় করছেন।

তার ছাত্র সোহেল রানা জানান, মেহেরপুর সরকারি কলেজের দ্বাদশশ্রেণীর ছাত্র তিনি। অর্থের অভাবে তার পড়া-লেখা প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। এখন আউটসোর্সিং এর মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করে পাড়ালেখার পাশাপাশি সংসারও চালাচ্ছেন তিনি। পল্লী চিকিৎসক নাছিম জানান, চাকুরি অথবা ব্যবসার পাশাপাশি আউটসোর্সিং এর মাধ্যমে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা পর্যন্ত বাড়তি আয় করছেন তাদের সাথে অনেকেই।

মুন্সী জাহাঙ্গীর জিন্নাতের সব সময়ের সহকর্মী আশরাফুল ইসলাম জানান, বিদেশ থেকে আসা টাকা পেপাল বা অন্য কোন সুবিধা না থাকায় আউট সোর্সিং এর মাধ্যমে উপার্জিত অর্থ তুলতে ভোগান্তি পোহাতে হয় তাদের। এছাড়া ইন্টারনেটের ধীর গতি ও বিদ্যুতের লোড শেডিং প্রধান অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ সমস্যার সমাধান হলে তারা আও এগিয়ে যাবেন বলে মনে করেন।

মেহেরপুর সরকারি কলেজের আইসিটি বিভাগের প্রধান ও পদার্থ বিজ্ঞানের প্রভাসক আব্দুল মালেক জানান, মুন্সী জাহাঙ্গীর জিন্নাত তারই ছাত্র। তার কৃতিত্বে তিনি খুশি। কৃষি প্রধান এ জেলার বেকার যুবক ও ছাত্রদের আউটসোর্সিং এর আরও প্রশিক্ষনের ব্যবস্থা করে তাদের কর্মসংস্থানের মাধ্যমে পারিবার, সমাজ ও রাষ্টের উন্নয়ন ঘটানোর আহ্বান জানান তিনি। বিস্তারিতঃ http://www.bangla.meherpurnews24.com/2014/01/14/%E0%A6%AE%E0%A7%87%E0%A6%B9%E0%A7%87%E0%A6%B0%E0%A6%AA%E0%A7%81%E0%A6%B0%E0%A7%87-%E0%A6%86%E0%A6%89%E0%A6%9F-%E0%A6%B8%E0%A7%8B%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%B8%E0%A6%BF%E0%A6%82-%E0%A6%8F-%E0%A7%A9/

1 টি মন্তব্য:

Blogger দ্বারা পরিচালিত.