মেহেরপুরে টর্নেডোয় আহত অর্ধশত : আশ্রয়হীন কয়েকশ মানুষ
মেহেরপুর সদর উপজেলার চাঁদবিল, দিঘিরপাড়া ও ঝাউবাড়িয়া গ্রামে টর্নেডোর আঘাতে আড়াই শতাধিক বাড়িঘর লণ্ডভণ্ড হয়েছে। দেয়াল চাপা ও গাছের ডাল পড়ে আহত হয়েছেন অর্ধশতাধিক লোক। গতকাল সোমবার সকালে চাঁদবিল গ্রামের ওবেদ আলী (৬০) নামের এক বৃদ্ধের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। গ্রামের বেশিরভাগ গাছপালা উপড়ে ভেঙে গেছে। আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছেন শ শ মানুষ।
চাঁদবিল গ্রামের প্রত্যক্ষদর্শীসূত্রে জানা গেছে, গ্রামের দক্ষিণ-পূর্ব কোণ থেকে টর্নেডো আঘাত হানে। মাত্র কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে গ্রামের হালদারপাড়া থেকে শুরু হয়ে মধ্যপাড়ার ওপর দিয়ে পশ্চিমপাড়া পর্যন্ত টর্নেডো ধ্বংসলীলা চালায়। গ্রামের বাইতুন নুর জামে মসজিদ ও হালদারপাড়া দুর্গা মন্দিরসহ দু শতাধিক বাড়িঘর লণ্ডভণ্ড করে দেয়। ঝড়ে ঘরচাপা ও গাছের ডাল পড়ে অন্তত অর্ধশতাধিক মানুষ আহত হয়। এদের মধ্যে বেশিরভাগ মানুষকে মেহেরপুর জেনারেল হাসাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।
এদিকে গতকাল সকালে বৃদ্ধ ওবেদ আলীর মরদেহ তার নিজ ঘর থেকে উদ্ধার করা হয়। পরিবারসহ স্থানীয় লোকজন ধারণা করছে, ঝড়ের সময় তিনি হৃদরোগের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা গেছেন। গতকাল সকাল ১১টার দিকে তার লাশ দাফন করা হয়েছে।
গতকাল সকালে গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, সড়ক ও পায়ে হাঁটার পথের ওপরে শুধুই ঘরের দেয়াল, গাছের ডাল ও বৈদ্যুতিক তার ছিঁড়ে পড়ে আছে। উপড়ে পড়েছে বড় বড় গাছগাছালি। পায়ে হাঁটা চলাচলের পথও বন্ধ। কাঁচা-পাকা অসংখ্য ঘরের দেয়াল ভেঙে পড়েছে। বাড়ির জিনিসপত্র ও ধান চাল কিছুই অবশিষ্ট নেই। সবই নিয়ে গেছে সর্বগ্রাসী টর্নেডো।
ঝড়ের তাণ্ডবে ওই গ্রামের গাছগাছালি ও বৈদ্যুতিক খুঁটি ভেঙে বিদ্যুত বিছিন্ন হয়ে পড়েছে। ক্ষেতের উঠতি ফসলেরও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। অপরদিকে একই সময়ে ঝাউবাড়িয়া ও দিঘিরপাড়া গ্রামে টর্নেডোর তাণ্ডবে অর্ধশত বাড়িঘর লণ্ডভণ্ড এবং অসংখ্য গাছগাছালির ক্ষতি হয়েছে। খবর পেয়ে রাতেই মেহেরপুর দমকলবাহিনীর সদস্যরা চাঁদবিল গ্রামে উদ্ধার অভিযান চালায়। গতকাল সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন জেলা প্রশাসক মাহমুদ হোসেন ও সদর উপজেলার অস্থায়ী চেয়ারম্যান আব্দুল মালেক মোল্লা। পরে জেলা প্রশাসকের ত্রাণ ভাণ্ডার থেকে সাড়ে তিনশ পরিবারকে ২০ কেজি করে চাল প্রদান করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক। মেহেরপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য জয়নাল আবেদীন, জেলা পরিষদের প্রশাসক মিয়াজান আলী, সাবেক সংসদ সদস্য মাসুদ অরুন, মেহেরপুর পৌর মেয়র
মোতাচ্ছিম বিল্লাহ মতু, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) আলমগীর হোসেন, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাজনীন সুলতানা, বিএনপি নেতা কর্নেল (অবঃ) সামসুল আলম সামস, আমঝুপি ইউপি চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম, বিএনপি নেতা আনছার-উল হকসহ বিভিন্ন এনজিও কর্মকর্তা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে তাৎক্ষণিক সহযোগিতার পাশাপাশি পুনরায় সহযোগিতার আশ্বাস প্রদান করেন। এছাড়াও ফ্রিল্যান্সার জাহাঙ্গীর জিন্নাত হিরকের সংগঠনক ইউনিক সফট বিডি, প্রথম আলো বন্ধু সভা, বন্ধু সংগঠন আমরা ৮৫ এবং জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে শুকনো খাবার ও নগদ টাকা প্রদান করা হয়েছে।
জেলা প্রশাসক জানিয়েছেন, মন্ত্রণালয়ে জানানো হয়েছে। ঈদের পরে ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের কাজ শুরু হবে। তবে পুনর্বাসনের জন্য সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি ও ব্যক্তিগত সহযোগিতা কামনা করেছেন ভুক্তভোগীরা। বিস্তারিতঃ http://mathabhanga.com/special-page/7215
কোন মন্তব্য নেই: