MyFreeLife: হও আগামী দিনের সাফল্যের গল্প

“গাইতে গাইতে গায়েন” বলে একটা বাংলা প্রবাদ আছে, অনেকটা সেইভাবেই আমি আজ একজন গর্বিত ফ্রীলান্সার। গল্পটা একটু শুরুর থেকে বলছি।
Priyo Logo

সালটা মনে আছে ২০০৯, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছুটিতে গ্রামে এসেছি, গ্রামের (আমঝুপী গ্রাম) চায়ের দোকানে বসে এক বড় ভাইয়ের (মামুন ভাই) কাছ থেকে এ গল্প শোনা যে, কাজ করে দিলে নাকি বিদেশ থেকে টাকা পাওয়া যায়, তাও আবার যেনতেন দেশ না, খোদ আমেরিকা থেকে। কথাটা শুনে একটু ধাক্কার মত লাগে, বিস্ময় আরও বাকি ছিল যখন ভাই বলল, “অনেকদিন তো কম্পিউটার চালাও, একটু চেষ্টা করলে তুমিও পারবে”, আসলে দেশের মাটিতে বসে বিদেশী কোম্পানির সাথে কাজ করে, বিদেশ থেকে টাকা নিয়ে আসাটা একটু বাড়াবাড়ি ধরণের গল্প মনে হল আমার কাছে, তাও আবার আমার মত অকর্মণ্যের জন্য, কারন, আমি আসলে শুধু কম্পিউটার চালাতেই পারতাম, আর কিছু না। ২০০৩ এ প্রথম কম্পিউটার চালানো শেখা, কিন্তু আসলে আমি কোন কাজই পারতাম না যা দিয়ে ইনকাম করা যায়( অন্তত আমার তাই মনে হত! ), তার উপরে আমি বেজায় ধরনের আলস। তবুও আমি বেশ কৌতূহলী হলাম( যদি আমায় দিয়ে কিছু হয়েই যায়, দেখি চেষ্টা করে!), বললাম ভাই, “আমিতো সেরকম কোন কাজও জানি না, তার উপর আমার কম্পিউটার নাই, আমি কি পারবো”? তখন ভাই বলল, “আমিতো এগুলা করি না, তবে আমার ভাই করে”, আমি বললাম, “ভাই থাকে কোথায়”? মামুন ভাই বলল, “ঢাকায়, তবে এখন বাড়িতে আছে, দেখা করতে চাও”? এমন অফার কি কেও মিস করে? আমি সাগ্রহে বললাম, “কখন”, ভাই বলল “এখন সময় থাকলে চল”, আমি বললাম, “চলেন”

মনে আছে সেই চলাটা আমার ফ্রীলান্সিং জগতের প্রথম পথচলা। পরিচিত হলাম মুন্সী জাহাঙ্গীর জিন্নাত (হীরক ভাই) এর সাথে। অনলাইনে যিনি এম জে জিন্নাত নামে সমাধিক পরিচিত। ভাইকে বললাম, “আসলেই কি কাজ করলে টাকা পাওয়া যায়”? তখন ভাই আদ্যোপান্ত সব ভেঙে বুঝায়ে দিল। সব শুনে আমি বললাম, “আমিতো ওয়েব ডিজাইন, এস-ই-ও, মিডিয়া মার্কেটিং কিছুই পারি না, আমি দ্বারা কি ফ্রীলান্সিং হবে না”? ভাই আমাকে সাহস দিয়ে বলল, হবে না কেন? অবশ্যই হবে, কিন্তু একটু সময় দিতে হবে। তারপর, ভাই আমাকে কয়েকটা সাইট এর লিঙ্ক দিয়ে বলল, “এইগুলাতে রেজিস্ট্রেশান কর, আর কাজের মধ্যে দেখ কোনটা তোমার ভাল লাগে, কাজ ভাল না লাগলে কাজ করে মজা পাবা না”।

আমি পড়লাম মহা ফ্যাসাদে, কোন কাজ সিলেক্ট করবো। সব কাজই মনে হয় কঠিন, ফাঁকিবাজদের জন্য কোন কাজ নেই ভাই, আমি জিজ্ঞাসা করলাম। ভাই হেঁসে বলল “না ভাই, যেই কাজই কর মন দিয়ে করতে হবে, না হলে এই লাইন তোমার জন্য না, তবে তোমার জন্য সেইটা সহজ মনে হয় খুজে বের কর”, আমি সেইদিনকার মত লিঙ্ক দুইটা নিয়ে বিদায় নিলাম, বললাম আমি আবারও আসব। ভাইয়ের নাম্বারটা নিয়ে রাখলাম। এখন আমার লক্ষ্য সাইবার ক্যাফে, লিঙ্কদুইটা ওপেন করলাম এবং রেজিস্ট্রেশান করলাম, লিঙ্কদুইতা ছিল ওডেস্ক আর ফ্রীলান্সার এর, কিন্তু সহজ কোন কাজ খুজে পেলাম না, সবই জটিল। কিন্তু, একটা ক্যাটাগরিতে চোখ আটকে গেল, “আর্টিকেল রাইটিং”, এইতাই আমার কাছে সহজ কাজ মনে হল, কারন, লেখালেখির প্রতি একটা ঝোঁক আমার আজীবনই ছিল, তাছাড়া, আমি ইংরেজিতে পড়ি, মোটামুটি ইংরেজিতে বলতে ও লিখতে পারতাম, তাই পরের দিন হীরক ভাইকে বললাম, আমি “আর্টিকেল রাইটিং” এ কাজ করতে চাই। ভাই বলল, ঠিক আছে, কাজের বর্ণনা পরে বিড করতে থাকো, তারপর ভাই আমাকে কভার লেটার, স্যাম্পল, কাজের ধরন বুঝায়ে দিল, আমি মহা উৎসাহে কাজে লেগে পড়লাম। কিন্তু, বিধি বাম! দিন যায়, সপ্তাহ যায়, মাস যায়, জব অ্যাপ্লিকেশান এর কোন রিপ্লাই আসে না, কি করা? এমনি আমি লোকের কম্পিউটার ব্যাবহার করি, কিছু সময় সাইবার ক্যাফে থেকে নেট ব্রাউজ করি। বুঝতেই পারছেন, পকেটের টাকার পুরা ফালুদা হয়ে গেছে। নিরুপায় আমি আবার হীরক ভাইকে বলি, “ভাই কোন রিপ্লাই তো পাইনা, কি করবো?” ভাই বলল পুরাতন জব অ্যাপ্লিকেশান ডিলিট করে তোমার পছন্দ মত ছোট ছোট সহজ প্রোজেক্ট এ বিড করো। সহজ কাজ দেখবা এবং অল্প বাজেট এ বিড করো তাহলে সহজে কাজ পাবা। আমি আবার নতুন উদ্যমে কাজ শুরু করলাম, এবার মাত্র ৯ দিনের অপেক্ষায় বায়ার রিপ্লাই করল। কাজটা ছিল, ৮ টা আর্টিকেল লিখে দেওয়ার, বাজেট ছিল, ৩০ ডলারের, আমি বিড করেছিলাম, ১৭ ডলারে, বায়ার ইন্টারভিউ নেওয়ার পর কাজটা দিয়ে দিল, ভাবলাম যাক বাবা, বাঁচা গেল! কিন্তু যত সহজ ভেবেছিলাম আর্টিকেল লেখাটা অতোটা সহজ না, কী-ওয়ার্ড ঠিকভাবে ব্যাবহার করা, আর্টিকেল এর ফ্লো ঠিক রাখা, আবার ইউএসএ পাঠকদের কথা মাথায় রেখে ভালোভাবে শেষ করাটা যে কতটা কঠিন (!) তা হাড়ে হাড়ে টের পেলাম, যাইহোক আর্টিকেলগুলো শেষ করলাম বায়ারের বেঁধে দেওয়া সময়ের আগেই, কিন্তু বায়ার বলল আরও একটু রিডার ফ্রেন্ডলি করে দিতে, আমি আবার রি-রাইট করলাম। পাক্কা ৮ দিনের বেলায়, বায়ার আমায় বলল, দ্যুতি তুমিতো জিনিয়াস!! আমি মনে মনে বললাম, ডেভিড ভাই (বায়ার এর নাম ছিল ডেভিড ফ্রাঙ্কেস্তটাইন ), এইটাই আমার ওডেস্ক প্রোফাইল এ লিখে দাও। যাইহোক, টাকা পেলাম, ভাল ফিডব্যাক পেলাম, তারপর, আর পেছন ফিরে তাকানোর সময় পাইনি, এত কাজের অফার পাইছি যে বাধ্যহয়ে বায়ারদের বলেছি ভাইরে সময় নাই( আর এক সময় কাজের জন্য ৩ মাস অপেক্ষা করেছি!) ছোটবড় মিলায়ে প্রায় ৪০ তার মত প্রোজেক্ট শেষ করেছি, ওডেস্ক এর বাইরে ফ্রীলান্সার ও কিছু ফিক্সড বায়ারের কাজ করেছি। কিছু ছোট বড় সমস্যা বাদে সব কাজই সফলতার সাথে শেষ করেছি, ওহঃ বলতে ভুলে গেছি এর মধ্যে নিজের ইনকাম দিয়ে একটা ছোটখাট ল্যাপটপও কিনেছি। যদিও ওইটা হারায়ে গেছে ( আমারই গাফেলতিতে), আবার একটা কিনেছি, বলা বাহুল্য এইটাও নিজের টাকার! আরও যেইটা লাভ হইছে, আমার অলসতা কেটে গেছে।

তিন বছর আগে আমি ফ্রীলান্সিং শুরু করেছিলাম ছোট একটা ভাবনা দিয়ে, “যদি আমি আর্টিকেল লিখতে পারি তাহলে আমার ইংরেজি লেখা ও পড়ার দক্ষতা বাড়বে”, এখন আমি আমেরিকানদের সাথে সকাল বিকাল কথা বলি, এখন আর আমার কোন আর্টিকেলই কেও খারাপ বলে না। আমার ইংরেজি লেখার দক্ষতাও বেড়েছে। সবকিছু মিলায়ে আমার স্বপ্ন মোটামুটি সফল, তবে একটা কথা না বললেই নয়, আমার তিন বছর আগে দেখা স্বপ্নের স্বপ্নসারথী হয়েছে অনেকে, যারা আমার হাজারো প্রশ্নের সহজ সমাধান দিয়েছেন। এবং, কারনে, অকারনে যাদের আমি অনেক জ্বালিয়েছি, কিন্তু কখনও তারা আমার দিকে অভিযোগের তীর ছোড়েনি। হীরক ভাই (মুন্সী জাহাঙ্গীর জিন্নাত) এমনই একজন মানুষ, যার ভালোবাসার কথা বলে শেষ করা যাবে না, আমার খাপছাড়া অনুরোধগুলো বিনা অভিযোগে মেনে নিয়েছে, এছাড়া ফ্রীলাঞ্চার এর লোগো এক্সপোসাল এর বিজয়ী নিপু ভাই(শাওন রহমান) আমার সাথে বিনা অভিযোগে সবসময় থেকেছে। যাদের কারনে আমি আজ এখানে লিখতে পারছি।

সবশেষে একটা কথাই শুধু বলতে চাই নতুনদের জন্য, কখনও আপনার ভাললাগা থেকে সরে যাবেন না। মনে রাখবেন, ফ্রীলান্সিং এ যেই কাজটাতেই আপনার ভাল লাগবে, সেইটাই করবেন, তবেই আপনার পথচলা হবে ভবিষ্যৎ দিনের তরুণদের প্রেরণা। বলা হয়, মানুষ তার স্বপ্নের মত বড়, আপনিও স্বপ্ন দেখুন, বলা যায় না, আপনার গল্প হতে পারেন ভবিষ্যৎ দিনের সাফল্যের প্রেরণা।

সবশেষে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আহবান, নেট এর স্পীড ও উচ্চমূল্য, পেপাল, এই সকল প্রযুক্তিগত সমস্যার আশু সমাধান করুন। দেখবেন আমরাই লিখবো ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের সফলতার গল্প!!
দ্যুতি প্রকাশ সরকার। বিস্তারিতঃ http://tech.priyo.com/blog/2013/02/18/8472.html

কোন মন্তব্য নেই:

Blogger দ্বারা পরিচালিত.